কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই কর্মচারী সুইপার ইউনুচ ও পিয়ন জসিমের বিরুদ্ধে অবশেষ কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সোলতান আহমদ সিরাজীকে গত ৩০/০৪/১৭ ইংরেজী তারিখে ৬১৩০ নং স্মারকের পত্রমূলে কক্সবাজার সিভিল সার্জন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, পেকুয়া সরকারী হাসপাতালের ওই দুই কর্মচারী বিরুদ্ধে গত ২০/০৪/২০১৭ ইংরেজী তারিখে কক্সবাজার সিভিল সার্জনের বরাবরে চিকিৎসক পরিচয়ে রোগীর অপারেশ করার অপরাধে লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেছিলেন পেকুয়ার সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন। তার অভিযোগের সূত্র ধরেই কক্সবাজার সিভিল সার্জন চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে চকরিয়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৬/০৫/২০১৭ইংরেজী তারিখ দুপুর ১২ টার দিকে তদন্ত অনুষ্টিত হবে। তদন্ত কার্যক্রমে ইতিমধ্যেই অভিযোগকারী সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন ও পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সুইপার ও পিয়ন জসিম উদ্দিনকে হাজির হওয়ার পত্র পাঠিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে। পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (সরকারী হাসপাতাল) এর জরুরী বিভাগে কোন চিকিৎসক ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ছিলনা। অবশ্য এসময় বাইরে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধির সাথে খোশগল্পেমত্ত অবস্থায় দেখা গেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা: মো. শামীমকে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কোন চিকিৎসক না থাকলেও কি! এসময় দেখা গেছে, হাসপাতালের জরুরী বিভাগের বেডে এক শিশুকে খতনার অপারেশন করাচ্ছেন হাসপাতালের সুইপার মো. ইউনুচ ও পিয়ন জসিম উদ্দিন! এসময় ইউনুচ ও জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা জানান, খতনার কাজে তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে বিধায় অপারেশন করাছেন। তাদের এ বিষয়ে কোন প্রশিক্ষন আছে কিনা জানতে চাইলে তারা কোন ধরনের সদুত্তর দিতে পারেনি।
ওই শিশুর অভিভাবক জানান, তার শিশুকে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আজ রোববার সকালে খতনা করার জন্য নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের সুইপার ইউনুচ ও এমএলএসএস জসিম উদ্দিন নিজেরা খতনার অপারেশন করবেন জানিয়ে তার শিশুকে জরুরী বিভাগের বেডে শুইয়ে দেন। এর পর ধারালো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অপারেশন শুরু করেন তারা। এ জন্য তারা কিছু টাকা তার কাছ থেকে নিয়েছেন। এভাবে প্রতিনিয়তই দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত রোগী ও অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন খোদ হাসপাতালের সুইপার ইউনুচ ও এমএলএসএস জসিম উদ্দিন!
এ প্রসঙ্গে জানতে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা: মো. মুজিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার হাসপাতালের সুইপার ইউনুচ ও পিয়ন জসিম উদ্দিন খতনার কাজে বেশ অভিজ্ঞ। তাই তারা ছোটখাট কিছু অপারেশন করে থাকেন। এ বিষয়ে তাদের কোন ডিগ্রি বা প্রশিক্ষণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ৮ জন ডাক্তার বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
অন্যদিকে পেকুয়ার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, নানান অনিয়ম ও অবব্যস্থাপনার কারণে পেকুয়া সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। এ হাসপাতাল থেকে রোগীরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেনা । দুপুর ১২ টার পর হাসপাতালে কোন ডাক্তার থাকেনা। সকাল ১০টার পরে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর বিক্রিয় প্রতিনিধিরা ডাক্তাদের চেম্বারে বসে খোশগল্পে মত্ত থাকে। আর হাসপাতালে রোগীর জন্য বরাদ্দের খাবার নিয়ে চলছে হরিলুট। রোগীদের জন্য সরকারীভাবে বরাদ্দের খাবারও লুটেপুটে খাচ্ছে হাসপাতাল কেনদ্রীক একটি সিন্ডিকেট। রোগীদের খাবার দীর্ঘদিন ধরে বাইরেও বিক্রি করে আসছে। এছাড়াও আরো নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে পেকুয়া সরকারী হাসপাতাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন রোগীরা।
পাঠকের মতামত: